বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
এস এল টি তুহিন, বরিশাল: দখিনা হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, চঞ্চল মৌমাছিদের ডানায়, পল্লব মর্মরে, বিবর্ণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠার সময়ে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে- ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…। ’ বসন্তেই ভালোবাসার ক্ষণ।প্রাণ খুলে কথা বলার মুহূর্তগুলো এসেছে। প্রকৃতির চারিপাশে লেগেছে দোলা। শীতের রুক্ষ, হিমেল দিনের অবসান ঘটিয়ে জেগে উঠেছে বসন্ত।আজ সোমবার পহেলা ফাল্গুন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তার আগেই মানব-মানবীর হৃদয় বেদি আর প্রজাপতির রঙিন পাখা, মৌমাছির গুনগুনানি, বৃক্ষ-লতা-ফুলে, পত্র-পল্লবে, নবযৌবনের বান ডেকেছে।
অভিন্ন এক অনুভূতিতে ভাসছে সবাই। কারও কণ্ঠে ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ/আমার বাড়ি আসে। ’ উদ্বেল হৃদয়ে দুলে উঠছে- ‘মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে…। ’শীতের স্পর্শে ঘুমিয়ে পড়া মালতী-রজনীগন্ধা, পলাশ-জবা, কৃষ্ণচূড়া আন্দোলিত হচ্ছে দখিনা বাতাসে। বাতাসে ভাসছে আমের মুকুলের ঘ্রাণ। প্রকৃতির এই রূপে মুগ্ধ কবিগুরু লিখেছেন, ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
’বসন্ত-বন্দনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘হয়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যতো আছে/হয়তো গাহেনি পাখি, অন্তর উদাস করা সুরে/…তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক। ’শীতের রিক্ততা মুছে দিয়ে প্রকৃতিজুড়ে এখন সাজসাজ রব। যদিও করোনাকাল এনে দিয়েছে অজানা ভীতি। তবুও নীল আকাশের সোনাঝরা আলোর মতোই হৃদয় আন্দোলিত। ‘আহা, আজি এ বসন্তে/কত ফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে/ কত পাখি গায়..। ’বসন্ত প্রেমের ঋতু।
মাতাল করা নানা ফুলের সৌরভে মানব হৃদয়ে পূর্ণতা পায় প্রেমের অনুভূতি। বসন্ত যেন সব বাধা ভেঙে দিয়ে প্রিয়তমার হাত ধরে বলতে চায়- ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/আমার আপনহারা প্রাণ/আমার বাঁধনছেঁড়া প্রাণ/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/তোমাকে অশোকে-কিংশুকে/অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণে সুখ…। ’ ফুলের মঞ্জরিতে মালা গাঁথার দিন বসন্ত শুধু প্রকৃতিকেই রঙিন করেনি, রঙিন করেছে বাঙালি তরুণ-তরুণীর প্রাণ।
তাই তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে, তরুণরা পাঞ্জাবি-পাজামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেয় শাশ্বত বাঙালিয়ানা।ফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চলছে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। কেউ সাজিয়েছেন বিশেষ পরিকল্পনা।আর যারা যাবেন বসন্ত উৎসবে, তাদের কাটবে নির্ঘুম রাত প্রিয়দর্শনের অপেক্ষায়।বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে হওয়ায় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় বেশি। নগরীর ফুল বিক্রেতারা দুটি ক্ষনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
যদিও দাদের দাবি করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। গতকাল নগরীর কাকলী মোড় এলাকার একটি ফুলের দোকানে তিন বান্ধবী এসেছিলেন চেরাগী পাহাড়ে, ফুল কিনতে। তারা বললেন, বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে ফুল কিনলেও ভালোবাসা দিবসে সবাই প্রিয়জনকে দিতে চায় তাজা গোলাপ, বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে খোপায় বাঁধে গাঁদা ফুল। তাই খুচরা বিক্রেতারা বিভিন্ন বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে বাড়তি দামে ফুল বিক্রি করে।